স্টাফ রিপোর্টার: যশোরের বাঘারপাড়ায় কথিত সাংবাদিক আখতারুজ্জামানের চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলের কার্ড গলায় ঝুলিয়ে ও মোটরসাইকেলে ‘সাংবাদিক’
স্ট্রিকার লাগিয়ে বীরদর্পে সরকারি-বেসরকারি অফিসসহ সব জায়গায় দাপিয়ে বেড়া”েছন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে চাঁদাবাজি চালিয়ে যা”েছন। শুধু তাই নয়; চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাত করেছেন প্রায় দশ লাখ টাকা। তার এসব কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে সম্প্রতি পুলিশ সুপার ও বাঘারপাড়া প্রেস ক্লাব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগে ওষুধ ব্যবসায়ী হারুন-অর-রশিদ
উল্লেখ করেছেন, উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া বাজারে তার একটি ফার্মেসী রয়েছে। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পেসক্রিপশনে ওষুধ বিক্রি করেন। প্রতিষ্ঠানের ট্রেড ও ড্রাগ লাইসেন্সসহ ওষুধ বিক্রয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও ঠিকঠাক ছিল। অথচ সংবাদ প্রকাশের হুমকি দিয়ে টিভি সাংবাদিক পরিচয়ে আখতারুজ্জামান তার কাছ থেকে নগদ দশ হাজার টাকা আদায় করেন।
যশোর সদরের লেবুতলা ইউনিয়নের আগ্রাইল গ্রামের লিলি ঘোষ কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, ‘দুই বছর আগে ছেলে প্রান্তের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে আখতারের আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে সে আমাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে এবং প্রান্তকে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। বিশ্বাস করে তার হাতে আমরা নগদ নয় লাখ টাকা তুলে দিই। তার প্রায় এক বছর পর আখতার সেনাবাহিনীর একটি যোগদানপত্র দেয়, কিš‘ সেটি ছিল ভুয়া। বিষয়টি তাকে জানালে আমাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। নিরুপায় হয়ে সর্বশেষ আমরা এসপি স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। গতকাল (বুধবার) বিকেলে ডিবি অফিসে আখতারকে নিয়ে বসা উঠার কথা রয়েছে। প্রান্তের বড় কাকা সেখানে গিয়েছে।’
বুধবার (৬ অক্টোবর) জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই সুলাইমান হোসেন অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে বাঘারপাড়ার বেসরকারি আনোয়ারা ক্লিনিকের ম্যানেজারের বরাদ দিয়ে পরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, গত মার্চ মাসে আখতার তার ক্লিনিকে এসে বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরেন। কোনভাবে তাকে বুঝিয়ে বিদায় দেন। পরবর্তীতে কয়েকবার ক্লিনিকে এসে রিপোর্ট করবে বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে ক্লিনিকের ম্যানেজার, সেবিকা ও কর্মচারীরা তাকে ধাওয়া করলে ক্যামেরাপার্সন নিয়ে সটকে পড়েন তিনি।
এছাড়াও দু’দিন আগে উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের ভগবানপুরে একটি বিয়ে বাড়িতে গিয়ে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন বলে আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। টাকা না দেওয়ায় ¯’ানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বরযাত্রীর গাড়ি আটকিয়ে নগদ তিন হাজার টাকা আদায় করেন। এর আগে গত ফেব্রæয়ারি মাসে জহুরপুর ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামে এক প্রবাসীর স্ত্রীর অনৈতিক কাজের ঘটনার সংবাদ প্রকাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিশ হাজার টাকা আদায় করেছেন বলে ভুক্তভোগী পরিবারটি অভিযোগ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক মাস আগে টিভি চ্যানেলের জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষ্যে আখতারুজ্জামান ২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করেন। চাঁদা দিতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেন সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম নুর-ই-এলাহী। এ কাজে সহযোগিতা করেন মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুভাষ সমাদ্দার, বেতালপাড়ার প্রধান শিক্ষক সহিদুল ইসলাম, পাঠান পাইকপাড়ার প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সেন ও জহুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিখা রানী কুন্ডু। জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা দেওয়ার জন্য আমি কোন স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ফোন করিনি। সুভাষ স্যার টাকা দেওয়ার জন্য আমাকে মেসেজ করেছিল।’ চাঁদা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক সুভাষ সমাদ্দার বলেন, ‘কাউকে টাকা দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়নি। ওই সাংবাদিক আখতারই আমাকে প্রথমে বলেছিল। পরে এটিও স্যারও ফোনে আমাকে বলেলো ভালো কাজ আপনারা সবাই সহযোগিতা করেন।’
জানতে চাইলে সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) এস এম নুর-ই-এলাহী বলেন, ‘টেলিভিশনের জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষ্যে আমরা টাকা দিয়ে তাকে সহযোগিতা করেছি।’
এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত সাংবাদিক আখতারুজ্জামানের মুঠোফোনে কল করলে তিনি ফোন রিসিভ
করেননি।